নবম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর : পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৭০.৮% অর্থাৎ প্রায় ৩৬.১ কোটি বর্গকিমি স্থান জুড়ে জলভাগ এবং প্রায় ২৯.২% অর্থাৎ, প্রায় ১৪.৯ কোটি বর্গকিমি স্থান জুড়ে স্থলভাগ অবস্থান করছে। অর্থাৎ পৃথিবীর ৩ ভাগই জল এবং ১ ভাগ হল। পৃথিবীর এই জলভাগকে বারিমণ্ডল (Hydrosphere) বলে। জলের ভাগ বেশি থাকে বলে।
নবম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
১. পৃথিবীর গােলকাকৃতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ কী?
অথবা, মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর আকৃতি কেমন দেখায়?
উত্তর : বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের সফল মহাকাশ অভিযানের ফলে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর সম্পূর্ণ ছবি তােলা সম্ভব হয়েছে। সফল মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন, নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন, ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা, রাকেশ শর্মা, কল্পনা চাওলা প্রমুখ মহাকাশচারী মহাকাশ থেকে পৃথিবীর যে দৃশ্য দেখেছেন, ছবি তুলেছেন এবং বর্তমানে পৃথিবীর চারদিকে ঘােরা অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ যে ছবি তুলছে তা থেকে পৃথিবীর গােলকাকৃতির ধারণা আমাদের কাছে স্পষ্ট। তবে এইসব ছবিতে পৃথিবী একেবারে গােল নয়। উত্তর-দক্ষিণে কিছুটা চাপা ও পূর্ব-পশ্চিমে কিছুটা ফোলা, এককথায় অভিগত গােলকের মতাে।
২. প্লুটোকে বামনগ্রহের অন্তর্ভুক্তকরণের পক্ষে তিনটি যুক্তি দাও।
উত্তর : সৌরজগতে কিছু জোতিষ্ক আছে যেগুলি গ্রহের মতাে দেখতে ও গােলাকার। কক্ষপথ অনুসরণ করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু ছােটো বলে নিজ কক্ষপথের আশপাশের মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে সরিয়ে দিতে পারে না। এদের বামন গ্রহ’ বলা হয়।
নামকরণ : রােমান মৃত্যু ও অপরাধ জগতের দেবতার নাম অনুসারে এই বামন গ্রহটির নামকরণ করা হয়। ২০০৬ সালে IAU (International Astronomical Union) প্লুটোকে বামন গ্রহের আখ্যা দেয়। কারণ।
অতি ক্ষুদ্র আকার : প্লুটোর আকার খুবই ক্ষুদ্র, পৃথিবীর আকারের তুলনায় প্রায় ৪৬৩ গুণ ছােটো। এই ক্ষুদ্র আকারের জন্য মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তু কখনাে কখনাে কক্ষপথে এসে পড়লে প্লুটো সেগুলি সরিয়ে দিতে পারে না।
বৈশিষ্ট্য : প্লুটো থেকে সূর্যের দূরত্ব বেশি হওয়ায়, (৫৯২.৪১ কোটি কিমি) উয়তা প্রায় –২৩০° সেন্টিগ্রেডে থাকে। তাই ঔজ্জ্বল্য ভাব পৃথিবী থেকে প্রায় ১৯০৫ গুণ কম লাগে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভরযুক্ত না হওয়ার কারণে এই গ্রহকে বামন গ্রহ বলে।
গুরুত্বহীনতা : ২০০৬ সালের আগে সৌরজগতে এটি গ্রহ। ছিল কিন্তু ওঅট-এর ২৬ তম অধিবেশনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানালেন ৪টি কুলীন গ্রহ ও ৩টি বামন গ্রহ আছে। কুলীন গ্রহ অপেক্ষা বামন গ্রহের সংখ্যা কম এবং অন্যান্য গ্রহ অপেক্ষা প্লুটোর গুরুত্বও কম হওয়ায় একে বামন গ্রহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৩. বারিমণ্ডল (Hydrosphere) বলতে কী বােঝাে? বারিমণ্ডলের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৭০.৮% অর্থাৎ প্রায় ৩৬.১ কোটি বর্গকিমি স্থান জুড়ে জলভাগ এবং প্রায় ২৯.২% অর্থাৎ, প্রায় ১৪.৯ কোটি বর্গকিমি স্থান জুড়ে স্থলভাগ অবস্থান করছে। অর্থাৎ পৃথিবীর ৩ ভাগই জল এবং ১ ভাগ হল। পৃথিবীর এই জলভাগকে বারিমণ্ডল (Hydrosphere) বলে। জলের ভাগ বেশি থাকে বলে।
- গুরুত্ব : নিচে বারিমণ্ডলের গুরুত্ব তুলে ধরা হল-
পৃথিবীতে জল কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় তিনটি অবস্থাতেই পাওয়া যায়। - জল সজীবের দেহে খাদ্য পরিবহণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে।
- জলে দ্রবীভূত হয়েই মাটির পুষ্টিগুণ উদ্ভিদের শিকড়ের দ্বারা পাতায় পৌঁছায় এবং জলের সাহায্যেই গাছ খাদ্য তৈরি করে।
- পৃথিবীর সমস্ত সাগর, নদী, হ্রদ, পুকুরে জল তরল অবস্থাতেই আছে।
- আন্টার্কটিকা মহাদেশ এবং উত্তর মেরু অণ্ডলে জল কঠিন, অর্থাৎ বরফাকারে আছে।
- বায়ুমণ্ডলে জল বাষ্পকারে অর্থাৎ, গ্যাসীয় অবস্থায় আছে, যা পরবর্তীকালে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে জলচক্র সম্পূর্ণ করে।
- জল ছাড়া জীবন অসম্ভব। জল পৃথিবীর উয়তার ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে থাকে।
৪. মানুষের আবাসস্থলরূপে পৃথিবীর গ্রহণযােগ্যতা আলােচনা করাে।
অথবা, পৃথিবী মানুষের বসবাসযােগ্য হয়ে উঠেছে কেন?
উত্তর : মানুষের বসবাসের জন্য একমাত্র উপযুক্ত আবাসস্থল হচ্ছে পৃথিবী। সৌরজগতে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। মানুষের আবাসস্থলরূপে পৃথিবীর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
পৃথিবী মানুষের বসবাসযােগ্য হয়ে ওঠার কারণ-
তাপমাত্রা : পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব হল প্রায় 15 কোটি কিলােমিটার। এই দূরত্বের জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় 15° সেন্টিগ্রেড থাকে। ফলে, পৃথিবী খুব একটা ঠান্ডা কিংবা গরম না হওয়ায় মানুষের বসবাসের পক্ষে খুবই উপযােগী হয়েছে।
সূর্যালােক : পর্যাপ্ত সূর্যালােক সূর্যালােক ছাড়া উদ্ভিদের বিকাশ সম্ভব নয়, প্রাণীকুলও জীবনধারণ করতে পারবে না। পৃথিবী সূর্য থেকে এমন দূরত্বে থাকে যে পর্যাপ্ত সূর্যালােক পায়, তাই পৃথিবীতে আবাসস্থল গড়ে উঠেছে।
সুবিস্তৃত জল : পৃথিবীর বৃহৎ একটি অংশই হল জলাময়। সাগর,মহাসাগর, নদী, নালা, খাল, হ্রদ, পুকুর, ভূগর্ভ কিংবা অন্যান্য জলাশয়ে থাকা জল মানবজীবনকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করে। যেমন-
i. পানযােগ্য জল মানুষের বেঁচে থাকতে ও তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে।
ii. পরিবহণের মাধ্যম রূপে কাজ করে।
i. সেচের কাজে লাগে।
iv. শিল্পপ্রক্রিয়াকরণে লাগে।
v. উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
vi. পরােক্ষভাবে বৃষ্টিপাত ঘটায় প্রভৃতি।
সুবিস্তৃত বায়ুমণ্ডল : পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের জন্য ভূপৃষ্ঠের ওপর বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত হালকা চাদরের ন্যায় বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব অনেকখানি। যেমন-
i. বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের একটি ভারসাম্য বজায় থাকে বলেই co এবং ০ – এর সাহায্যে পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী সহজেই বেঁচে থাকতে পারে।
ii. বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন পরােক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটায়।
iii. ওজোন (০) গ্যাসের আবরণ সূর্য থেকে ক্ষতিকারক রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশে বাধা দেয়।
iv. অক্সিজেনের জন্য পৃথিবীতে আগুন জ্বালানাে যেমন সম্ভব হয়েছে তেমনি কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।
v. বায়ুমণ্ডলীয় জলীয়বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে পৃথিবীতে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
শিলামণ্ডলের প্ৰভাব : পৃথিবীর বহিরাবরণে থাকা শিলামণ্ডল বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন-
i. মাটিকে কেন্দ্র করে মানুষসহ বিভিন্ন জীবের আশ্রয়স্থল গড়ে ওঠে।
ii. মাটিতে বেড়ে ওঠা উদ্ভিদের কাছ থেকে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ফল, ফুল, কাঠ, মধু, মােম, বিভিন্ন ওষধি, এমনকি বিশুদ্ধ বায়ু পেয়ে থাকে।
iii. মাটিকেই মানুষ ফসল উৎপাদনের একমাত্র মাধ্যমৰূপে বেছে নেয়।
iv. পৃথিবীতে বিভিন্ন শিলায় প্রাপ্ত বিভিন্ন খনিজ সম্পদ (লােহা, তামা, বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ, অভ্র প্রভৃতি) ও শক্তি সম্পদ (কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি)-কে কেন্দ্র করে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন আবর্তিত হয়। মােট কথা বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও শিলামণ্ডলের
সবশেষে বলা যায়, পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ পৃথিবীকে বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বাসযােগ্য গ্রহে পরিণত করেছে।
►► আরো দেখো: ভুগোল সকল অধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তর
পশ্চিমবঙ্গের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, এখানে আমরা শুধু প্রশ্নগুলো আলোচনা করেছি। তোমরা চাইলে পিডিএফ ফাইলে নবম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর সহ ডাউনলোড করতে পারো। এজন্য ওপরে দেওয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করো।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।