কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর (PDF)

কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর : কাব্যাংশটি মধ্যযুগের কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘অম্বিকামঙ্গল’ কাব্যের অন্তর্গত। প্রজা চমকিত হল কেন? বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে সমগ্র কলিঙ্গদেশ ধুলােয় ডেকে যায়।এবং প্রবল দুর্যোগে শস্যখেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রজারা চমকিত হয়।

কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন
১. ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি কার লেখা, কোন্ কাব্যের অন্তর্গত?
উত্তর: কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি মধ্যযুগের কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘অম্বিকামঙ্গল’ কাব্যের অন্তর্গত।

২. মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীযাল কাব্যটি অন্য কী কী নামে পরিচিত?
উত্তর: মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি ‘অভয়ামঙ্গল’,’চন্ডিকামঙ্গল’, ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’,’অম্বিকাঙাল’ প্রভৃতি নামেও পরিচিত।

৩. মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমণ্ডল কাব্যটির ক-টি খণ্ড ও কী কী?
উত্তর: মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটির দুটি খণ্ড, যথা— আখেটিক খণ্ড এবং বণিক খন্ড |

৪. কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ চণ্ডীমণ্ডল কাব্যের কোন্ খণ্ডের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘কলিদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের অন্তর্গত।

৫. “দেখিতে না পায় কেহ অঙগ আপনার ||’—কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙুল দেখতে পাচ্ছে না কেন?
উত্তর: চারদিকের আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হওয়ায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢেকে গেছে, ফলে কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছেন।

৬. উচ্চনাদে কলিঙ্গ কীসের ডাক শােনা গিয়েছে?
উত্তর: ঘন মেঘে ঢাকা কলিঙ্গের আকাশে জোরে জোরে মেঘের ডাক শােনা গিয়েছে।

৭. “প্রলয় গগিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।”–মন্তব্যটির অর্থ লেখাে।
অথবা, কলিঙ্গের প্রজাদের মন বিষাদগ্রস্ত কেন?
উত্তর: চারদিক মেঘে ঢাকা অবস্থায় মুশলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঘনঘন মেঘের ডাকে প্রজারা ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কায় বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

৮. “হড় হড় দুড় দুড় বহে ঘন ঝড়।”~-উক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশটিতে কলিঙ্গদেশে মেঘের প্রবল গর্জন এবং মুশলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রচন্ড ঝড় হচ্ছিল তার ভয়ানক রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।

৯. বিপাকে ভবন ছাড়ি গ্রজা দিল রড় ||’–কোন্ বিপাকে পড়ে প্রজারা পালিয়েছিল?
উত্তর: মুশলধারায় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভয়ংকর ঝড়ের তাণ্ডবে আসন্ন পদ্যেকেথা ভেবে প্রজারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল

১০. শ্রীকবিকঙ্কণ কার উপাধি?
উত্তর: শ্রীকবিকঙ্কণ কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর উপাধি।

১১. “ধূলে যাচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত”—লাইনটির অর্থ লেখাে |
উত্তর: “ধূলে যাচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত”—আইনটির অর্থ হল সবুজ শস্যখেত ধুলােয় ঢেকে গেল।

১২ .প্রজা চমকিত হল কেন
উত্তর: বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে সমগ্র কলিঙ্গদেশ ধুলােয় ডেকে যায়।এবং প্রবল দুর্যোগে শস্যখেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রজারা চমকিত হয়।

১৩. “চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গরজ ‘চারি মেঘ’-এর নাম লেখাে।
উত্তর: ‘চারি মেঘ’ হল সম্বৰ্ত, অাবর্ত, পুকর এবং দ্ৰোণ |

১৪. চারদিকে মেঘে জল দেয় কারা?
উত্তর: কলিলাদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সময় চারদিকে মেঘে জল দিয়েছিল ‘অষ্ট গজরাজ’ বা আটটি শ্রেষ্ঠ হাতি।

১৫. জলধারার বর্ষপকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: জলধারার প্রবল বর্ষশকে করি-কর অর্থাৎ হাতির গুঁড় দিয়ে জল লার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

১৬. “কারাে কথা শুনিতে না পায় বোনাে জন।’—কারও কথা শুনতে না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বারবার মেঘের প্রবল গর্জনে কলিজাবাসী কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছিল না।

১৭. মেঘ ঝড়বৃষ্টির থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কনিবাসী কার কথা স্মরণ করেছেন?
অথবা, কলিলবাসী জৈমিনিকে স্মরণ করে কেন?
উত্তর: মেঘ ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী ঋষি জৈমিনির কথা স্মরণ করেছেন।

১৮. “না পায় দেখিতে কেহ রবির কি ||’রবির কিরণ দেখতে না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: ভয়ংকর কালাে মেঘে চারদিক ডেকে গিয়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কেউ সূর্যরশ্মি দেখতে পাচ্ছিল না।

১৯. গর্ত ছেড়ে কারা জলে ভেসে বেড়াচ্ছে?
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কলিঙাদেশ জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় গর্ত ছেড়ে সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে |

২০. কলিঙ্গদেশে কত দিন টানা বৃষ্টিপাত হয়েছিল ?
উত্তর: কলিঙ্গদেশে টানা সাত দিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

২১. সাত দিনের বৃষ্টিতে কৃষিকাজ ও ঘরবাড়ির কী ক্ষতি হল?
উত্তর: সাত দিনের বৃষ্টিতে শস্যখেত জলে ডুবে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেল এবং প্রবল শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেল।

২২. “ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল ||’—কবি কোন বিষয়ের সঙ্গে এমন তুলনা করেছেন?
উত্তর: প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের চাল ভেদ করে যে শিল মেঝেতে এসে পড়ে তার সঙ্গে ভাদ্র মাসের পাকা তালের তুলনা করা হয়েছে।

২৩. কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে শিল পড়াকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: ‘কলিজাদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশে বড়াে আকারের শিল পড়াকে ভাদ্র মাসে তলি পড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে |

২৪. “চণ্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান।”—আদেশ পেয়ে হনুমান কী,করেছিল? |
উত্তর: দেবী চণ্ডীর আদেশ পেয়ে বীর হনুমান মঠ, অট্টালিকা ভেঙে খানখান করেছিল।

২৫. “উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল ||—এর কারণ কী?
উত্তর: পর্বতের সমান নদীর ঢেউয়ের দাপটে কলিঙ্গদেশের বাড়িঘর জলে ভাসতে ভাসতে টলমল করছিল।

২৬. ‘চারিমেঘ’ বলতে কোন মেঘকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর:’চারিমেঘ’বলতে সম্বর্ত, আবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ-চার প্রকারের কে বোঝানো হয়েছে।

২৭. ‘প্রজা দিল রড়’-‘রড়’ শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: দৌড়ানো বা ছুটে যাওয়া।

২৮. ‘বেঙ্গ তরকা বাজ’কি?
উত্তর:ব্যাঙের মতন তড়কা করে লাফিয়ে লাফিয়ে যে বাজ পড়ে তাকে বেঙ্গল তড়কা বাজ বলে।

২৯. ‘উঠে-পড়ে ঘরগুলো করে দলমল’-ঘরগুলো দলমল করার কারণ কি?
উত্তর: সাত দিনের বর্ষণে কলিঙ্গ শহরে প্রবল বন্যা হয়। পর্বত সমান ঢেউ হয়ে বন্যার জল আসে পড়ে ঘরগুলোতে। তাই সেখানকার ঘরগুলো দলমল করছিল।

৩০. জৈমিনি কে কখন তারা স্মরণ করে?
উত্তর: কলিঙ্গ দেশে যখন প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় তখন বারবার বাজ করতে থাকে। সেই সময় ভীত জৈমিনি কে স্মরণ করে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

১. “দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার “- কোন পরিস্থিতিতে এরকম হয়েছিল?
উত্তর: কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর “কলিঙ্গদেশে ঝড় -বৃষ্টি” নামক কাব্যাংশে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় এরকম ঘটনা ঘটেছিল। কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দেয়। ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। সমগ্র কলিঙ্গদেশ গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায়।

ঘন কালো মেঘের বুক চিরে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায় ঘন ঘন। এতটাই ঘন অন্ধকার যে তা ভেদ করে প্রজাদের চেহারা পর্যন্ত দেখার উপায় ছিল না। তাই উদ্ধৃত অংশটি তে বলা হয়েছে “দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার”।

২. “কলিঙ্গে উড়িয়া মেঘ ডাকে উচ্চনাদ”_ কলিঙ্গের অবস্থান উল্লেখ করো :
উত্তর: অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরভাগ, বর্তমান ওড়িশার বেশিরভাগ অংশ এবং মধ্যপ্রদেশের কিছুটা জুড়ে ছিল প্রাচীন কলিঙ্গ দেশ।
প্রলয়ের ফলাফল: কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি তে প্রবল প্লাবন ঘটে। চরম বিপদের আশায় প্রজারা ঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। ঝড় এতটাই ভয়াবহ হয় শস্যখেত গাছপালা সব নষ্ট হয়ে যায়। পথঘাট সব ডুবে একাকার হয়ে যায়। এতটাই গাঢ় অন্ধকার ছড়িয়ে পরে যে দিনরাত্রি নিরূপণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

প্রজারা একটু পরিত্রাণের আশায় ঋষি জৈমিনি কে স্মরণ করে। শিলাবৃষ্টি শুরু হয় এবং সেই শিলা এক একটা তালের মত আকারের। অসংখ্য ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। দেবীর আদেশে নদনদী সব কলিঙ্গের দিকে ছুটে আসতে থাকে। এক-একটা ঢেউ আসতে থাকে পর্বত শিখর এর সমান উঁচু হয়ে যা ঘরবাড়ি কে ভেঙে তছনছ করে দেয়।

দেবী চণ্ডীকার আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভীতসন্ত্রস্থ প্রজারা অসহায় হয়ে পড়ে এবং আরো চরম বিপদের আশঙ্কায় তারা কলিঙ্গদেশে ছেড়ে চলে যেতে থাকে। এই ছিল প্রলয়ের ফলাফল এবং এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় সমগ্র কাব্যাংশটি কে নিয়ন্ত্রণ করে গেছে। যার ফলে ফুটে উঠেছে প্রজাদের অসহায়তা যা থেকে পরিত্রানের চেষ্টায় তারা অন্যত্র পলায়ন করে।

৩. কাব্যাংশে উল্লিখিত জৈমিনি ঋষির আসল পরিচয় বর্ণনা করো?
উত্তর: ঋষি জৈমিনি আসলে “পূর্ব মীমাংসাদর্শন” এর রচয়িতা। জৈমিনি ঋষি বেদের কর্মকাণ্ডের সূত্রগুলোকে সংশোধন ও সুসংবদ্ধ করেন। ভাগবত অনুযায়ী তিনি মূলত ব্যাসের শিষ্য। তিনি যে মহাভারত রচনা করেন তার নাম হলো “জৈমিনি মহাভারত “।

জৈমিনি ঋষির নাম স্মরণে আনলে বজ্রপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই বিশ্বাসেই বজ্রপাতের সময় মানুষ ভক্তিভরে তার নাম স্মরণ করে এবং তার নাম কীর্তন করে। এই কারণেই কলিঙ্গ বাসীরা মেঘের গুরু গম্ভীর গর্জন এবং ঘন ঘন বজ্রপাতের ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ঋষি জৈমিনি কে স্মরণ করতে থাকে।

৪. “চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ”_ উদ্ধৃত অংশটির গুরুত্ব আলোচনা করো?
উত্তর: কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত” কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি” কবিতায় দেবী চণ্ডীর আদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে কলিঙ্গদেশে। গাড় ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। মেঘের গর্জনে সবাই শংকিত হয়ে ওঠে। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি সব আছড়ে পড়ে। সবুজ শস্যের জমি ধুলোতে ঢেকে যায়।

বৃষ্টির তীব্রতা এতই বেশি যে আটটি হাতি তাদের শুঁড় দিয়ে জল দিচ্ছে এমন মনে করা হয়। যে আটটি হাতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি হল বামন, পুণ্ডরীক, কুমুদ, পুষ্পদন্ত, সার্বভৌম, ঐরাবত, অঞ্জন, এবং সুপ্রতীক। মনে করে নেওয়া হয় যে এই আট হস্তীর শুঁড়ের সাহায্যে চার মেঘ জল দিচ্ছে। আর তার ফলে প্রবল বৃষ্টিপাতে চারপাশের এই বেহাল অবস্থা।

৫. “ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতায় আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হয়। তৈরি হয় বন্যার আশঙ্কা প্রবল। ঝড়বৃষ্টি কলিঙ্গদেশে সর্বনাশ ডেকে আনে। উদ্ধৃতাংশটিতে সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের বর্ণনা করা হয়েছে | কলিঙ্গদেশে আকাশের উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান কোণে মেঘের ঘনঘটায় চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। প্রজারা সেই অন্ধকারে নিজেদেরকেও দেখতে পাচ্ছে না | মেঘের বুক চিরে অবিরাম বিদ্যুতের ঝিলিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তােলে |

৬. প্রলয় গগিয়া প্ৰজা ভাবয়ে বিষাদ।’—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রজাদের বিষাদের কারণ আলােচনা করাে।
উত্তর: কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উধৃতিটিতে কলিঙলাদেশের প্রজাদের কথা বলা হয়েছে।
কলিঙ্গদেশের আকাশে হঠাৎ প্রচুর মেঘ জমাট বাঁধে। ঈশান কোণে জমাটবাঁধা মেঘ সারা আকাশ ঢেকে ফেললে সর্বত্র অন্ধকার নেমে আসে। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূর থেকে মেঘের গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে। মেঘের প্রবল গর্জন ও ঘনঘন বিদ্যুৎচমকের সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত | মহাপ্লাবনের আশঙ্কায় প্রজারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৭. “বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।”—“রড়’ শব্দের অর্থ কী? কোথাকার প্রজারা কী কারণে বিপাকে পড়েছিল?
উত্তর: ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উধৃতাংশে উল্লিখিত ‘রড়’ শব্দের অর্থ ‘পালিয়ে যাওয়া।
দেবী চণ্ডীর ইচ্ছা অনুযায়ী কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি বিপর্যয় ডেকে আনে। আকাশ ঘন মেঘে ঢেকে যায়| ঘন অন্ধকারে প্রজাদের নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখার উপায় থাকে না| প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে মেঘের গম্ভীর গর্জন ও ঝড়ের তাণ্ডবে সেখানকার প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

৮. “পরিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।’—‘পরিচ্ছিন্ন’ শব্দের অর্থ কী? কবি এরকম বলেছেন কেন?
উত্তর: কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতায় পাওয়া ‘পরিচ্ছিন্ন’ শব্দটির অর্থ হল ‘বিভেদ’ বা পার্থক্য’ | দেবীচণ্ডীর ইচ্ছায় কলিঙ্গদেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়| সমগ্র আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। বিদ্যুৎ চমক আর মেঘগর্জনের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। প্রজারা ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

সবুজ শস্যের খেত ধুলােয় ঢেকে যায়। প্রবল বৃষ্টিতে জলে ডুবে যায় চারপাশ। জল-স্থল একাকার হয়ে পথ হারিয়ে যায়। মেঘের গর্জনে কেউ কারাের কথা শুনতে পায় না। অন্ধকার এতটাই নিবিড় হয়ে যায় যে দিন এবং রাত্রিকেও কেউ আলাদা করতে পারে না।

৯. “চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ।”—উধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতায় দেবী চণ্ডীর নির্দেশে কলিঙ্গদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে ঘন কালাে মেঘে আকাশ ঢেকে যায় | প্রবল মেঘগর্জনে প্রজারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঝড়ের তাণ্ডবে তারা ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। সবুজ শস্যের খেত ধুলােয় ঢেকে যায়।

বৃষ্টি এতটাই তীব্র হয় যে কবি মনে করেন, আটটি দিকের পাহারাদার আটটি হাতি-ঐরাবত, পুণ্ডরীক, বামন, কুমুদ, অঞ্জন,পুষ্পদন্ত, সার্বভৌম এবং সুপ্রতীক যেন তাদের খুঁড়ের সাহায্যে চারমেঘে জল দিচ্ছে। আর তার ফলেই প্রবল বৃষ্টিপাতে চারপাশ জলে ডুবে গেছে।

১০. “কলিঙে সােঙরে সকল লােক যে জৈমিনি। – জৈমিনি কে? কলিগবাসীর জৈমিনিকে স্মরণের কারণ কী?
উত্তর: কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশে উল্লিখিত জৈমিনি হলেন এক বাক্সিদ্ধ ঋষি। এনার নাম স্মরণ করলে বজ্রপাত বন্ধ হয়ে যায় এই বিশ্বাসে বজ্রপাতের সময় মানুষ এঁর নামকীর্তন করে।

কলিঙাদেশের আকাশে হঠাৎ ঘন কালাে মেঘ জমে ওঠে। আকাশভাঙা মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে মুশলধারায়। মেঘের গম্ভীর গর্জন, ঘনঘন বজ্রপাত, ঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে ভীত কলিঙ্গাবাসী এই ভীষণ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে।

কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর

১.“প্রলয় গগিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।”—কী দেখে প্রজাদের প্রলয় মনে হয়েছিল? এই প্রলয়ের ফলে কী হয়েছিল?
উত্তর: মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গাদেশে ঝড়বৃষ্টি’ নামক কাব্যাংশে কলিঙদেশের আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। উত্তর-পূর্ব কোণে মেঘের সঙে দেখা দেয় বিদ্যুৎচমক | চারদিকে মুশলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। এইসব দেখেই প্রজাদের মনে প্রলয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়।কলিঙ্গের আকাশে ঈশান কোণে, মেঘ জমা হয়।

ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়৷ দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর আওয়াজের সঙ্গে শুরু হয় মুশলধারায় বৃষ্টি | বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে | ঝড়ের দাপটে শস্যখেত এবং সবুজ গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। আটটি দিকের আটটি হাতি যেন বৃষ্টিধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। প্রবল বৃষ্টিতে পথঘাট জলে ডুবে যায় | ঘাের অন্ধকারে দিনরাত্রির পার্থক্য মুছে যায়। জলমগ্ন রাস্তায় সাপ ভেসে বেড়াতে থাকে। ভীত প্রজারা এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে|

সাত দিন ধরে একটানা বৃষ্টির ফলে কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায়।ভাদ্র মাসের তালের মতাে বড়াে আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করেপড়তে থাকে| দেবীর আদেশে সমস্ত নদনদী কলিঙের দিকে ছুটে আসে দেবীর আদেশে | পর্বতের মতাে উঁচু ঢেউয়ের আঘাতে বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায়, ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় অবশেষে কলিঙ ত্যাগ করে চলে যায়।

২. ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতায় প্রকাশিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চিত্র কতটা বাস্তবতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে আলােচনা করাে। অথবা, কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতায় কলিঙ্গে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছিল তা কীভাবে কলিজাবাসীর জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিল বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশে দেবী চণ্ডী তার কৃপাধন্য ব্যাধ কালকেতুর তৈরি গুজরাট নগরে বসতি প্রতিষ্ঠার জন্য কলিঙ্গদেশে প্লাবন ঘটান।কলিঙ্গের আকাশে ঈশান কোণে মেঘ জমা হয়। ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর ধ্বনির সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি।বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে| ঝড়ের দাপটে শস্যখেত এবং সবুজ গাছপালা নষ্ট হয়ে যায় | আটটি দিকের আটটি হাতি যেন বৃষ্টিধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় |

প্রবল বর্ষণে পথঘাট জলে ডুবে যায়। ঘাের অন্ধকারে দিন রাত্রির পার্থক্য মুছে যায়। জলমগ্ন রাস্তায় সাপ ভেসে বেড়াতে থাকে। ভীত প্রজারা এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে নিস্তার পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে| সাত দিন ধরে অবিরাম বর্ষণের ফলে কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায় | ভাদ্র মাসের তালের মতাে বড়াে আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে। দেবীর আদেশে সমস্ত নদনদী কলিঙ্গের দিকে ছুটে আসে দেবীর আদেশে পর্বতের মতাে উঁচু ঢেউয়ের আঘাতে বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায়, ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায়। শেষপর্যন্ত কলিঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়।

৩. কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কাব্যাংশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি কিভাবে ধরা পড়েছে তা লেখ ।
উত্তর: কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের আখেটিক খন্ড থেকে ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি নেওয়া হয়েছে । এই কাব্যাংশটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে তা হল—
কলিঙ্গদেশ ঘন মেঘে ঢেকে যায়, ঈশান কোণে ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায় । ঘন ঘন বিদ্যুতের চমকানিতে কলিঙ্গের প্রজারা নিজেদের চেহারা দেখতে পায় না ।

গুরুগম্ভীর মেঘের গর্জনের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় । টানা সাতদিন ধরে প্রবল বর্ষণে কলিঙ্গদেশ জলে ভেসে যায় । বৃষ্টিপাতের সঙ্গে শুরু হয় প্রবল ঝড় । প্রজারা ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রওনা দেয় । চারপাশের সবুজ প্রকৃতি ধুলায় মলিন হয়ে যায় । ঝড়-বৃষ্টির দাপটে সমস্ত শস্য নষ্ট হয়ে যায় । মুষলধারায় বৃষ্টি দেখে মনে হয়, আট দিকের আটটি হাতি যেন কলিঙ্গদেশকে জলে ভাসিয়ে দিতে চায়— ‘চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ ।’ জল ও স্থল মিশে একাকার হয়ে গেছে, মানুষ পথ খুঁজে পায় না ।

ঘন মেঘের অন্ধকারে চারিদিক এমন হয়ে গেছে যে, সকল দিন ও রাত্রির ভেদাভেদ মুছে গেছে । প্রজারা বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে । সাপের আশ্রয়স্থল জলে ভরে যাওয়ায় সাপ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে চারিদিকে ভেসে বেড়ায় । প্রবল বৃষ্টিপাতে প্রজাদের ঘরবাড়ি, শস্য নষ্ট হয়ে যায় । প্রবল ঝড়ে মঠ, অট্টালিকাও ভেঙে পড়ে । পর্বতের সমান বড় বড় ঢেউ উঠে ঘরবাড়ি সব ধুলিস্যাৎ করে দেয় । প্রজারা এই চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অত্যন্ত দুর্বিপাকে পড়ে । সাতদিন ধরে চলে এরূপ প্রাকৃতিক তান্ডব । নিরুপায় হয়ে কলিঙ্গের মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয় ।

উত্তর ডাউনলোড করো


আরো দেখো: নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন


মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক  অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।

Leave a Comment